কিভাবে বুজবেন আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসেন?
আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা যে কোন মুমিনের সবচেয়ে বড় কামনা, সবচেয়ে বড় ছাওয়া, সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হওয়া উচিৎ। আল্লাহ তায়ালা যখন কাউকে ভালোবাসেন বা কাউকে পছন্দ করেন তখন বেশ কিছু আলামত আছে যেঁগুলো দেখে আমরা অনুমান করতে পারি আল্লাহ তায়ালা কাকে ভালোবাসেন এবং কাকে ভালোবাসেন না।
আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসার আলামতের কথা নবি করিম সাঃ এর হাদিসে এসেছে তার মধ্যে আমরা চারটি আলামতের কথা আমরা উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ।
আরও পড়ুনঃ যাদের আমল আল্লাহ কবুল করেন না
আল্লাহর প্রিয় বান্ধাকে মানুষ ভালোবাসে
আল্লাহ তায়ালা যখন কোন বান্ধাকে ভালোবাসেন তখন তিনি জিবরীলকে নির্দেশ করে বলেন ঐ মানুষের আমলের এবং চিন্তা ধারার কারণে, চলাফেরার বিশুদ্ধ উপায় এবং পদ্ধতির কারণে আমি তাকে ভালোবাসি, অতএব জিবরীল তুমিও ঐ মানুষকে ভালোবাস, তখন জিবরীল আসমানে গোষনা দেন আল্লাহ ঐ মানুষকে ভালোবাসেন এবং নির্দেশ করেছেন ঐ মানুষকে ভালোবাসার তাই তোমরাও তাকে ভালোবাস।
তখন আসমানের সকল ফেরেশতা ঐ মানুষটিকে ভালোবাসতে শুরু করেন, এবং আল্লাহ স্বয়ংক্রিয় ভাবে পৃথিবীতে যারা বসবাস করে তাদের অন্তরে ঐ ব্যাক্তির প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেন।
আরও পড়ুনঃ দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
আর আল্লাহ যদি কাউকে অপছন্দ করেন তাহলে একই ভাবে আল্লাহ জিবরীল (আঃ) কে বলেন ঐ মানুষকে আমি তার কর্মের কারণে অপছন্দ করি, তুমিও অপছন্দ কর, আসমানের ফেরেশতারাও অপছন্দ করে এবং পৃথিবীর মানুষও তাকে অপছন্দ করে।
এই হাদিস থেকে বুঝা গেল আল্লাহ যখন কাউকে ভালোবাসেন তখন পৃথিবীর বেশিরবাগ মানুষ তাকে ভালোবাসেন বা বিশেষ করে যারা তার কাছের মানুষ যারা তাকে চিনে জানে তাদের সকলের ভালোবাসা আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি সৃষ্টি করে দেন।
আরও পড়ুনঃ আমাদের জীবনে কেন বিপদ আসে
এর মানে এই নয়যে বিভিন্ন নায়ক নাইয়কা, খেলোয়াড় এবং অন্যান্য জনপ্রিয় মানুষদের ভালোবাসেন।
এখানে মানুষের ভালোবাসা বলতে বুঝানো হয়েছে ইমানদার এবং নেক্কার ব্যাক্তিদের ভালোবাসা বুজানো হয়েছে, আল্লাহ তার একজন প্রিয় বান্দার প্রতি ভালোবাসা তার আরেক প্রিয় বান্দার অন্তরে সৃষ্টি করে দেন। তাহলে বুঝা গেলো ভালো মানুষেরা যাকে ভালোবাসবে, ইমানদার ব্যাক্তিরা যাকে ভালোবাসবে আল্লাহ তায়ালাও তাকে ভালোবাসেন।
আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন থাকে বিপদ-আপদ দেন
আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন তাকে কষ্ট দেন, বিপদ-আপদ দেন, মুসীবতে ফেলেন এটা হলো একটা আলামত যে আল্লাহ তায়ালা ঐ মানুষকে ভালোবাসেন।
এবিষয়ে সুনানে তিরমিজির এক হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ আর যখন আল্লাহ তায়ালা কোন মানুষকে অথবা কোন জাতীকে ভালোবাসেন তখন তাদের পরীক্ষা নেন, তাদের বিপদ-আপদ দেন, কষ্ট দেন, রোগ দেন, বিভিন্ন অসুবিদায় ফেলেন এবং নানা ভাবে তাদের পরীক্ষা করেন।
আল্লাহর দেওয়া এই পরীক্ষায় বিপদ-আপদে, কষ্টে যে ব্যাক্তি সন্তুষ্ট হয়ে যায়, এবং আল্লাহর ফায়সালাকে মেনে নেয় তার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অবধারিত রয়েছে।
আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর এই কষ্ট দেওয়ায়, বিপদ-আপদে ফেলায় অসন্তুষ্ট হয়ে যায় এবং আল্লাহর ফায়সালাকে মেনে নিতে পারেনা, হায় হুতাশ করে, অস্তির হয়ে যায় তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐ ব্যাক্তির জন্য অসন্তুষ্ট অবধারিত হয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ ধৈর্যশীল হওয়ার উপায়
তাই যেকোন বিপদ-আপদে হতাশ হওয়া যাবেনা, আল্লাহকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলা যাবেনা, সর্বধা সকল বিপদ-আপদে আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে এবং আল্লাহর সকল ফায়সালাকে নির্দ্বিধায় হাঁসি মুখে মেনে নিতে হবে।
মুমিন ব্যাক্তিকে আল্লাহ দুনিয়া থেকে দূরে রাখেন
আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসার আরেকটি আলামত হলো তিনি যাকে ভালোবাসেন তাকে দুনিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন, দুনিয়ার সাথে মিশে হাবুডুবু খেয়ে একাকার হয়ে যাওয়া থেকে হেফাজত করেন।
আমরা অনেকেই দুনিয়া চাই, পদ, পদবী, অর্থ, সম্পদ, প্রবাব এইগুলো চাই, আমরা সবাই এইগুলো চাই।
কিন্তু আল্লাহ তায়ালা ভালোবেসে কিছু মানুষকে এইগুলো থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন, সে চাইলেও সেগুলো অর্জন করতে পারেনা। আল্লাহ তায়ালা থাকে পরিকল্পিত ভাবে দুনিয়া থেকে সরিয়ে রাখেন।
কারণ সে ঐ যায়গায় গেলে তার ক্ষতি হবে। দুনিয়ার সাথে মিশে গেলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ মানুষকে গুনাহ করতে উৎসাহিত করে চার বিষয়
এই প্রসঙ্গে রাসুল (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের প্রিয়জন কেউ অসুস্ত হলে এবং পানির সংস্পর্শে গেলে সমস্যা হলে থাকে যেরকম পানির সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখো আল্লাহ সেই রকম ভাবে তার প্রিয় বান্দাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে রাখেন।
এবার আমার-আপনার জীবনের যত অপ্রাপ্তি সেগুলো যদি আল্লাহ ভালোবেসে দান না করে থাকেন তাহলে আমি-আপনি যা হারালাম তার থেকে অনেক বেশি কিছু পেলাম, আল্লাহর ভালোবাসা পেলাম।
আল্লাহর প্রিয় বান্দারদের তালিকায় চলে গেলাম। অনন্ত অসিমকালের জান্নাত আমার হয়ে গেল। অতএব দুনিয়ার কিছু না পেলে মুমিন ব্যাক্তি কখনো হতাশ হয়ে যাবেনা, অস্তির হয়ে যাবেনা।
ভালো কাজ করার সুযোগ পাওয়া
আল্লাহর তায়ালার ভালোবাসার আরেকটি আলামত হলো, তিনি যাকে ভালোবাসেন থাকে নেক এবং ভালো কাজ করার সুযোগ করে দেন, তাওফিক দান করেন।
ভালো পতে চলার সুযোগ দেন। রাসুল (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহ তায়ালা কারো কল্যাণ চান অথবা থাকে দিয়ে কল্যাণ করাতে চান, অথবা থাকে ইসলামের জ্ঞান দিতে চান। ইসলামের জ্ঞান অর্জন করার তাওফিক পাওয়া, ভালো কাজ করার তাওফিক পাওয়াও আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসার একটি আলামত।
উপসংহার
আমরা জানতে পেরেছি যে এই ৪টি আলামতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য নিশ্চয়ই সর্বদা তার ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে, ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং হুকুম আহকাম মেনে চলতে হবে।