আমাদের জীবনে কেন বিপদ আসে

আল্লাহ তার বান্ধাদের পরীক্ষা নেন কেন? কেন আমাদের জীবনে কেন বিপদ আসে? এর অন্যতম কারণ হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের উপরে উঠাতে চান। যেমন প্রথম শ্রেণী পাঁশ করে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠা যায়, ঠিক একই ভাবে ইমানদার ব্যাক্তি যখন পরিক্ষা দিতে থাকে তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন থাকে ইমানদার ব্যাক্তি হিসাবে উপরে উঠাতে থাকেন।

এর জন্য বিপদ-আপদ আসলে সবর এবং ধৈর্য দরতে হবে। আল্লাহ কোরআনে বলেছেনঃ- ওলা তাহিনু ওলা তাহঝানু – তোমরা মন খারাপ করবেনা, তোমরা পেরেশান হবেনা এবং চিন্তিত হবেনা। তুমি নিজে দেখ তুমি ইমানদার কি না।

তোমার বিতরে ইমান আছে কি না, তুমি শিরক মুক্ত ইমান লালন কর কি না, তুমি এই বিষয়টি নিশ্চিত হউ এবং যাচাই কর। এটা হতে পারে পরীক্ষা, হতে পারে অন্য আরেকটি বড় বিপদ থেকে মুক্তির কারণ, হতে পারে শাস্তি। সর্বক্ষেত্রে তার সুক্রিয়া আদায় করুন এবং বেশি বেশি আমল করে আল্লাহর আরও নিকটে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

আরও পড়ুনঃ ধৈর্যশীল হওয়ার উপায়

তোমার বিতরে যদি ইমান থাকে এবং আল্লাহর প্রতি আস্তা অবিচল থাকে তাহলে মনে রাখবে তুমি কখনো পরাজিত হবেনা। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন যারা ইমানদার, স্বয়ং আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদের বিপদে আল্লাহ শান্তনা দেন। উহুদের যুদ্ধে নবি করিম (সাঃ) এর সাহাবিগন সাময়িক বিপর্যয়ের কারণে তাদের মনে কষ্ট হয়েছে, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের শান্তনা দেওয়ার জন্য কোরআনের আয়াত নাযিল করে বলেছেন, তোমার চিন্তা করার কোন কারণ নাই, যদি তুমি ইমানদার হয়ে থাকো তাহলে তুমি মরলেও তোমার জন্য রয়েছে সুসংবাদ এবং বাঁচলেও রয়েছে অসংখ্য নিয়ামত।

আরও পড়ুনঃ মানুষকে গুনাহ করতে উৎসাহিত করে চার বিষয়

অনেক মানুষ বলে থাকেন ভাই এত বিপদ দেয়ালে পিট টেঁকে গেছে আর পারিনা, অনেক মা-বোন বলেন যে স্বামী এত খারাপ যে আর ঠিকা যায়না। অনেক জুলুম, অনেক কষ্ট, এবং হতাশার কারণে দুর্দশা গস্থ মানুষেরা নিরাশ হয়ে যায়, আল্লাহর প্রতি অভিযোগ করা শুরু করে, আল্লহর প্রতি নালিশ করা শুরু করে। এরকমটা কখনো করা যাবেনা। এবং মনে রাখতে হবে প্রতিটা কষ্টের শেষ রয়েছে তবে আপনার কষ্ট যদি জিবনে শেষ না হয়, এবং এমতাবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন তাহলে সেই কষ্টের জীবন আপনাকে অনন্ত কালের মুসিবত থেকে রক্ষা করবে ইনশাআল্লাহ। 

যদি আমার-আপনার ৫০-৬০ কিংবা ৭০ বছরের বিপদ, দুঃখ, কষ্ট হয় এবং সেই ৫০-৬০ কিংবা ৭০ বছরের বিনিময়ে যদি অনন্ত কালের জান্নাত পেয়ে যাই। তাহলে এই এই বিপদের বিনিময়ে যে সুখ আমি-আপনি পেলাম সেটা নিশ্চয়ই লাভজনক। কিন্তু সয়তান আমাদের এভাবে বুজতে দেয়না। সয়তান আমাদের অস্তির করে দেয়। মনে রাখবেন বিপদে যারা বেঙে পরে তখন অনেক মানুষ বলে আমার আর রক্ষা হবেনা, আমার আর বাছার রাস্থা নাই। অনেকে আল্লাহর অনাআস্থা প্রকাশ করে, আল্লাহর প্রতি বরশা হাঁড়িয়ে ফেলে, তাহলে তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী দুঃখ কারণ তারা দুনিয়াতে কষ্ট করার পরে আল্লাহর প্রতি বরশা হাঁড়িয়ে ইমান হারা হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। এবং মৃত্যুর পরেও তার কষ্ট অর্থাৎ মুনাফিকের শাস্তি পেতে থাকেন। 

আমাদের জীবনে কেন বিপদ আসে

একবার প্রিয় নবি (সাঃ) একলোকের অসুস্থ অবস্থায় থাকে দেখতে গিয়েছেন, এবং তার মাথার পাছে বলছেন আল্লাহ চাহিলে তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। তখন ঐ লোন বলছে না সুস্থ হবনা। আল্লাহর প্রতি বরশা না থাকার কারণে এবং নবি করিম (সাঃ) এর কথার উপর কথা বলার কারণে কিছুক্ষণ পরেই তার মৃত্যু হয়েছে। নবি করিম (সাঃ) এর সান, এবং মর্যাদা আল্লাহর কাছে এত বেশি যে নবি করিম (সাঃ) এর মুখের উপর কেউ কথা বললে, আল্লাহর রাব্বুল আলামিন তার শাস্তি দুনিয়াতেই নিশ্চিত করেন, এবং এখেরাতেও রয়েছে চরম শাস্তি। 

রাসুল সাঃ আমাদের সাহস দিয়েছেন, যখন বিপদ আসে তখন অনেকে এমন এমন কথা বলে যার কারণে তার ইমান চলে যায়, অনেককে বলতে শুনবেন- ছেলে কিংবা মারা গেছে এবং তার মা-বাবা বলতেছেন আজরাইল শুধু আমার ছেলে-মেয়েকে দেখলো আর কেউকে দেখলনা। এই রকম ছোট ছোট কথায় আমার-আপনার ইমান চলে যায়। এজন্য রাসুল সাঃ সাহস দিয়েছেন বিপদ আসলে তোমরা সবর কর আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাদের উত্তম নিয়ামত দিবেন।

অনেক সময় আমাদের এই রকম বিপদ হয় যেমন আপনি ঢাকা যাবেন এবং আপনার ব্যাস আপনাকে ছেড়েই চলে গেছে এবং সমস্যা হলো এরপর আর কোন ব্যাস নেই, এটা অবশ্যই আপনার জন্য একটি বিপদ, এবং আল্লাহকে দুশারুপ করতে শুরু করলেন এবং নিজের কপাল ছাপরাতে থাকলেন, তবে কিছুক্ষণ পরেই জানতে পারলেন ঐ ব্যাসটির সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যাসে থাকা সকল মানুষ মারা গেছে, হ্যাঁ আল্লাহ এই রকমি আপনাকে বিপদে ফেলেন আরও অনেক বড় বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্য, তাই বিপদ আসলেই আল্লাহর থেকে নিরাশ হওয়া যাবেনা, ধৈর্য ধারন করে আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করতে হবে, কেনোনা আল্লাহ যা করেন বান্ধার ভালোর জন্যই করেন। 

একটি বাস্তব ঘটনা, একলোক সৌদি আরবে বেশ কিছু বছর জাবত একটি হোটেল বাড়া নিয়ে বেবসা করে আসছেন, সৌদি হাজীরা তার হোটেলে বাড়া নিয়ে থাকতেন এবং এভাবেই তার রুজির বেবস্তা হতো, তবে হঠাৎ একদিন অন্য একজন মানুষ ঐ হোটেল মালিকে আরও বেশি টাকা দিয়ে তার কাছ থেকে হোটেলটি নিয়ে নেয়, তখন তিনি অনেক কষ্ট পান এবং বাংলাদেশে চলে আসতে হয়, সাল ২০১৯। তার কিছুদিন পর পুর পৃথিবী জুড়ে হানা দেয় করোনা ভাইরাস, আর একেএকে লকডাউন হতে শুরু করে শহরগুলো, সেই সাথে হজ করতেও নিশেদাজ্ঞা দেওয়া হয়, হজ করার সুযোগ পান খুবি অল্প সংখ্যক মানুষ। 

আর ঐ ব্যাক্তির যেহেতু হোটেল বেবসা রয়েছে মানুষ যত কম হজ করতে আসবে তার ইনকাম তত কম হয়, এরকম ভাবে তার হোটেলটি প্রায় ২ বছর উল্লেখ যোগ্য কোন ইনকাম করতে পারেনাই, ইনকাম করতে না পারলেও বাড়া দিতে হয়েছে প্রতি মাসেই। ঘটনা ক্রমে হোটেলের প্রথম বাড়াটিয়া ব্যাক্তি যিনি বাংলাদেশে চলে এসেছিলেন তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি খুব কষ্ট পেয়ে বাংলাদেশে এসেছিলাম কিন্তু এর জন্য যদি আমি আল্লাহর পায়ে সারা জীবন সেজদা করি তাহলেও এর সুক্রিয়া আদায় করে শেষ করতে পারবনা, কারণ ঐ সময় যদি আল্লাহ আমাকে দেশে নিয়ে না আসতেন তাহলে দুই বছর কোন ইনকাম না করে হোটেল বাড়া দেওয়া আমার জন্য কোন ভাবেই সম্বভ হতনা। এমনকি এরপর পুর ১০ বছর এই হোটেল বেবসা করে লাভের মুখ দেখতে পারতাম না। তাই সব সময় বিশ্বাস রাখুন আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন, বিপদ তু উসিলা মাত্র, বিপদে আপদে ফেলার দারা আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করেন এবং হেফাজত করেন। 

উপসংহার

আল্লাহ সর্বশক্তিমান, তার সমকক্ষ কেউ নেই, তিনি আমাদের তার অসংখ্য নিয়ামতের মাধ্যমে সর্বধা ডুবিয়ে রেখেছেন। তার দয়ায় আমরা বেছে তাকি, অনেক সময় তিনি আমাদের বিপদে ফেলেন শুধু মাত্র ইমানের পরীক্ষা জন্য, তার কাছে টানার জন্য, অথবা অন্য কোন বড় বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্য। 

আপনি বিপদে পড়লে এটা হতে পারে আপনার জন্য মঙ্গলজনক, এটা হতে পারে আপনার জন্য পরীক্ষা, অথবা এটা হতে পারে আপনার শাস্তি। মঙ্গলজনক হলে সুক্রিয়া আদায় করুন, পরীক্ষা হলে উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করুন, শাস্তি হলে তার শাস্তি থেকে বাছার চেষ্টা করুন বেশি বেশি আমল এবং ভালো কাজ করার মাধ্যমে। 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *