দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, যত নবি রাসুল পৃথিবীতে এসেছেন এবং আল্লাহর যত প্রিয় বান্দা আসেছেন তাদের প্রত্যেকেরই জিবনে দুশ্চিন্তা এসেছে। তারা তাদের সেই কঠিন সময় গুলোতে আল্লাহ পাঁকের কাছে সাহায্য এবং আশ্রয় পার্থনা করার মাধ্যমে নিজেদের এতটাই নিরাপদে রেখেছেন এবং ভালো রেখেছেন যে কোন বিপদ কিংবা মুসীবত তাদের বেঙে ফেলতে পারেনাই। বরং বিপদেও তারা হেসেছেন এবং স্তির থেকেছেন মানসিক ভাবে। আজ আমরা সেরকম কয়েকটি আমলের কথা বলব যে গুলোর মাধ্যমে আমাদের বিপদ আপদ এবং মুসীবত আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দূর করবেন এবং বিপদ আপদেও মানসিক ভাবে আমদের প্রশান্ত ও স্তির রাখবেন।
আরও পড়ুনঃ আমাদের জীবনে কেন বিপদ আসে
Contents
দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় – আল্লাহর জিকীর
দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন দূর করার আমল গুলোর মধ্যে সর্ব প্রথম এবং প্রধান আমল হলো যিকরুল্লাহ বা আল্লাহর জিকীর, আল্লাহর জিকীর এর চাইতে কার্যকর কোন ঔষধ নেই ডিপ্রেশন দূর করার জন্য, কুরআনে কারিমে আল্লাহ বলেছেনঃ আলা বিজিক রিল্লাহি তাথমা ইন্নাল কুলুব – আল্লাহ তায়ালার জিকীরের মাধ্যমে মানুষের অন্তর প্রশান্ত হয়ে থাকে, অতএব আল্লাহ তায়ালার সরণ অন্তরে রাখা, মুখে আল্লাহ তায়ালার কথা বলা এবং আল্লাহ তায়ালার সাথে একান্তে কথা বলার মাধ্যমে ডিপ্রেশন দূর কথা যায় সবচেয়ে সহজে।
আরও পড়ুনঃ ধৈর্যশীল হওয়ার উপায়
আল্লাহর জিকীর করার একটা বিশেষ পদ্ধতি হলো কুরআন তেলাওয়াত, কুরআনে কারিমের তেলাওয়াত যদি আপনি করেন তাহলে দেখবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অলৌকিক ভাবে আপনার মধ্যে প্রশান্তি সৃষ্টি করে দিবেন। আল্লাহর জিকীরের আরেকটি বিশেষ পদ্ধতি হলো সকাল এবং সন্ধ্যায় কিছু দুয়া ও জিকীর রয়েছে, যেঁগুলো প্রিয় নবি করিম (সাঃ) পড়তেন। সেগুলো যদি আমরা নিয়মিত পরতে পারি তাহলে এর মাধ্যমে আমরা নিশ্চয়ই দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশনের থেকে বাঁচার উপায় আমরা খুঁজে পাব, ইনশাআল্লাহ।
নবী করিম সাঃ এর বিশেষ দোয়া
দ্বিতীয় যে আমলের মাধ্যমে আমরা দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন দূর করতে পারি তা হলো নবি করিম সাঃ এর সাঁরা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল এবং বিশেষ জিকীর, যে জিকীর তিনি আল্লাহ তায়ালার কাছে নিবেদন করতেন তার কঠিন সময়ে, যখন দেয়ালে পিট টেঁকে যেত ঠিক সেই সময়ে,
জিকীরটি হলোঃ লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল আযিমুল হালিম, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রাব্বুল আরশিল আযিম, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রাব্বুস সামা-ওয়া-তি ওরাব্বুল আরধি ওরাব্বুল আরশিল কারীম।
এই জিকীরের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের শিখরিতি এবং আল্লাহর মাহাত্ত বর্ণনা করার মাধ্যমে আমরা দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি লাভ করতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া
দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য প্রিয় নবি সাঃ সাঁরা জীবন এই দোয়া পাঠ করেছেন, হযরত আনাস (রাযী) নবি রাসুল সাঃ এর ১০ বছরের খাদেম ছিলেন, তিনি বলেন আমি নবি করিম (সাঃ) কে দেখেছি এই দোয়া তিনি সবসময় পাঠ করতেন। এবং আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়াঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযান ওয়াল আজমি ওয়াল কাসাল ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবোল, ও-দলায়িদ দাইনি ও-গালাবাতির রিজাল।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা, পেরেশানি, অপারগতা, অলসতা, কৃপণতা, কাপুরুষতা, ঋণের বোঝা এবং মানুষের আধিপত্য থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন
যে আমলের মাধ্যমে আমরা দুশ্চিন্তা, পেরেশানি এবং জীবনের কঠিন সময়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিশেষ সাহায্য পেতে পারি তা হলো সালাত। সালাত হলো আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম,
প্রিয় নবি (সাঃ) বলেনঃ বান্দা যখন সেজদায় চলে যায় তখন আল্লাহর সবচাইতে নিকটতম অবস্থানে সে চলে যায়, আল্লাহর সবচেয়ে কাছাকাছি যেতে পারে। (সহিহ মুসলিমঃ ৪৮২)
এজন্য প্রিয় নবি (সাঃ) এর সাঁরা জীবনের অভ্যাস ছিল যখনি কোন সমস্যা দেখা দিত তখন তিনি সালাত আদায় করতেন। (সুনান আবু দাউদঃ ১৩১৯)
দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে মুক্তির জন্য সালাত একটি অতুলনীয় আমল, এর সঙ্গে অন্য কোনটির কোন তুলনা চলেনা। আমার-আপনার জীবনে যখনি কোন বিপদ দেখা দিবে, কোন পেরেশানিতে বেঙ্গে পরার উপক্রম হবে তখনি সাথে সাথে ওযু করে দুই রাকাত সালাতে দারিয়ে জাব (নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত) এবং দীর্ঘ কেরাত, দীর্ঘ রুকুতে, দীর্ঘ সেজদায় দিরস্তিরতার সাথে দুই রাকাত সালাত আদায় করে আল্লাহর কাছে হাত তুলে আমরা চোখের পানি ফেলে দিব।
আরও পড়ুনঃ মানুষকে গুনাহ করতে উৎসাহিত করে চার বিষয়
সালাতের মধ্যে দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে মুক্তি লাভের জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর, সে সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ বিস্ময়কর ভাবে অলৌকিক ভাবে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দান করেন তা হলো তাহজুদুস সালাহ, বুর রাতে যখন সবাই গুমীয়ে থাকবে তখন আপনি ঘুম থেকে উঠে ওযু করে দুই রাকাত সালাতে দারিয়ে যাবেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে দিরস্তিরতার সাথে আল্লাহর কাছে সালাত নিবেদন করবেন, সালাতের পর যখন আপনি দুই হাত তুলে দোয়া করবেন তখন জর জর করে আপনার চোখের পানি চলে আসবে, পানি না আসলে কান্নার ভাব করুন এবং আল্লাহর সাথে এখান্তে কথা বলে আপনি দুশ্চিন্তা ও পেরেশালি থেকে মুক্তি লাভ করবেন, ইনশাআল্লাহ।
অতএব দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন দূর করার জন্য তাজ্জুদের সালাতের আমলটিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে করার চেষ্টা করতে হবে।
নিয়মিত ইস্তেগফার পাঠ
দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশন ও পেরেশানি থেকে মুক্তির আরেকটি আমল হলো ইস্তেগফার পাঠ করা। এই আমলটির মাধ্যমে আমরা বিপদ আপদ এবং কঠিন সময়ে আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারি। ইস্তিগফার এমন একটি বিষয় কোন কোন বর্ণনায় বর্ণীত হয়েছে নবি করিম (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি ইস্তাগফারকে নিজের জন্য অবদারিত করে নেয়, অপরিহার্য করে নেয়, নিয়মিত ইস্তিগফার পড়তেই থাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার সমস্থ পেরেশানি থেকে মুক্তির পত সহজ করে দেন এবং পত বের করে দেন।
কুরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ যে মানুষেরা ইস্তিগফারের মধ্যে রত থাকে আল্লাহর আজাব তাদের প্রতি আসেনা। (সুরা আনফালঃ আয়াত ৩৩) এজন্য দুশ্চিন্তা, পেরেশানি, বিপদ-আপদ যে কোন কঠিন সময়ে আমরা ইস্তিগফার পাঠ করব।
রাসুর (সাঃ) এর দুরুদ পাঠ
দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য রাসুল (সাঃ) এর দুরুদ পাঠ করুন, দুরুদের আমলটির মাধ্যমেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষের অন্তরকে প্রশান্ত করে থাকেন, স্তির করে থাকেন, অন্তরের পেরেশানি দূর করে থাকেন, বিপদ-আপদ এবং মুসীবত থেকে আল্লাহ তায়ালা মুক্তি দান করে থাকেন।
দান-সাদকা করা
দান-সাদকা আমরা সাদ্ধ অনুযায়ী আমরা যতটুকু করব এর মধ্যে আল্লাহ আমাদের বিপদ-আপদ এবং কঠিন সময়ে সাহায্য করবেন এবং মুক্তি নসিব করবেন।
উপসংহার
বিপদ-আপদ এবং মুসীবত আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কখনো কখনো দিয়ে থাকেন কল্যাণে যার বিনিময়ে আল্লাহ জান্নাত দিবেন, দুনিয়াতে যদি আমি-আপনি সারা জীবন কষ্ট করি বিপদে থাকি, মুসীবতে থাকি এবং এর বিপরীতে যদি চিরকালের জন্য অনন্ত অসীম কালের জন্য জান্নাত আমার হয়ে যায় তাহলে এটা কিন্তু আমার-আপনার লাভ হলো। এটা লস বা ক্ষতিকর নয়। এজন্য দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন যদি কোন কারণে দূর না হয় তাহলে নিশ্চিত ভাবে একজন ইমানদার মনে রাখবেন এই দুশ্চিন্তা, পেরেশানি, বিপদ-আপদের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁকে মহা কল্যাণের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কঠিন সময় গুলোতে আম্বিয়া (আঃ) এর মত সবরে জামিল বা উত্তম ভাবে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক নসিব করুন, সকল বিপদ-আপদ, সকল দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে আমাদের সকলকে মুক্তি নসিব করুন।