ধৈর্যশীল হওয়ার উপায় | আল্লাহ ধৈর্যশীলদের দুনিয়াতেই উত্তম নিয়ামত দিবেন

নবি করীম (সাঃ) বলেছেন কোন মুসলমানের জিবনে যদি কোন মুসিবত আসে, কোন বিপদ আসে আর সঙ্গে সঙ্গে সে যদি ইন্না লিল্লাহি ওইন্না ইলাইহি রাজিয়ুন পড়ে এবং সেই সাথে আরেকটি দুয়া পড়ে আল্লাহুমাহ জুরনি ফী মুসিবাতি ওখলোফলি খাইরাম মিনহা, এর অর্থ – আল্লাহ বিপদের বিনিময়ে আপনি আমাকে সুয়াব দিয়েন এবং বিপদে আমার যে ক্ষতি হয়েছে এরচেয়ে ভালো কিছু দিয়ে আমাকে পুশিয়ে দিয়েন। এই দুয়া যদি কেউ পড়ে তাহলে ঐ বিপদে তার যা ক্ষতি হবে আল্লাহ তার থেকে বেশি দিয়ে নিশ্চয়ই থাকে পুশিয়ে দিবেন। 

আরও পড়ুনঃ মানুষকে গুনাহ করতে উৎসাহিত করে চার বিষয়

উম্মে সালামা (রাযীঃ) নবি করীম (সাঃ) এর স্ত্রী বলেন, আমি নবি করীম (সাঃ) এর স্ত্রী কিভাবে হয়েছি তুমরা জানো? তিনি বলেন আমার স্বামী আবু সালামা যখন মারা গেলেন তখন আমি খুব বেশি বেতিত হলাম যে” একজন ভালো সঙ্গি এবং স্বামী হারালাম, তখনি আল্লাহর কাছে কেদে কেদে নবি করীম (সাঃ) এর শিখানো এই দুয়া পরেছি আল্লাহুমাহ জুরনি ফী মুসিবাতি ওখলোফলি খাইরাম মিনহা। তারপরেই আল্লাহ তায়ালা অকল্পনীয় ভাবে আমাকে মুহাম্মোদ (সাঃ) এর স্ত্রী বানিয়ে দিয়েছেন। 

অতএব যেকোন বিপদে ইমানদারের ইমান যত মজবুত হবে সে ততবেশি হাঁসতে পারবে যে আলহামদুলিল্লাহ আমার রব আমাকে যে অবস্থায় রেখে খুশি আমিও এই অবস্থার উপরে খুশি এবং বিপদ যতই আসবে আমি সেটাকে স্বাগতম জানাব, বেসবর এবং ধৈর্যহীন হবনা। 

আমাদের সংসার গুলোতে আজ যে অশান্তি, আমাদের সমাজে যে বিস্রিংখলা অশান্তি এর মূল কয়েকটা কারণ যদি বের করা হয় তাহলে অন্যতম প্রধান কারণ হবে ধৈর্যহীনতা এবং সবরহীনতা। ঘড়ে ঘড়ে সংসার গুলো ঠিকছেনা বেঙ্গে খান খান হয়ে যাচ্ছে, প্রতি মুহূর্তে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে এর অন্যতম কারণ ধৈর্যহীনতা। যে ধৈর্য জিনিষটা আমাদের সমাজে আর নাই, এটাকে আমরা এবাদত মনে করিনা। 

একটি জটিলতা হলো অন্তরের আমল গুলোকে আমরা গুরুত্ব দেইনা, অতচ অন্তরের আমলের গুরুত্ব অনেক বেশি। আমরা বাহ্যিক আমলকে গুরুত্ব দেই, যেমনঃ- নামাজ, রোজা, যাকাত, কোরআন তেলাওয়াত। এই আমল গুলো বাহ্যিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে করতে হয়। তবে কিছু আমল আছে অন্তরে লালন করতে হয় এগুলো দেখা যায়না, এর বিতরে সবর অন্যতম। এই আমলটা যদি কেউ করতে পারে অন্তরে যদি কেউ ধৈর্যটা আনতে পারে তাহলে আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে উত্তম নিয়ামত দিবেন দুনিয়াতে ও এখেরাতে। 

মুহতারাম হাজিরিন নবি করীম (সাঃ) তিনি তার সাহাবায়ে কেরামদের সবরের প্রধিক্ষন দিয়েছেন, এমন কিছু সাহাবি সঙ্গি তিনি পেয়েছেন যারা ধৈর্যের রুদ্র প্রতীক ছিলেন, একজন সাহাবির ধৈর্যকে যদি গবেষণা করেন তাহলে সেটা ইতিহাস হয়ে যাবে যা এখন মুসলমানদের মধ্যে বড় অভাব, মুশকিল হল আমরা যারা বদ মেজাজি আমাদের সবর কিভাবে আসবে আমরা অনেকে চেষ্টা করি কিন্তু ধৈর্য ধারন করতে পারিনা।  

ধৈর্যশীল হওয়ার উপায়

১. আপনার বিতরে সবর আনার জন্য আপনি প্রতিনিয়ত আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দুয়া করবেন, যে আল্লাহ আপনি আমাকে সবর এবং ধৈর্য ধারণ করার তাও্বফিক দান করুন, যেকোন বদ আমল দূর করার জন্য আল্লাহর কাছে পানাহ ছাইতে হয়। 

২. ধৈর্যশিল মানুষদের সাথে থাকতে হবে, সমাজে এমন কিছু মানুষ আমরা দেখতে পাই যাদের উপরে তুফান বয়ে যায় কিন্তু তারা ঠান্ডা মাথায় সব হেনডেল করছেন, অস্তির হচ্ছেন না। এইরকম কিছু মানুষ সকল সমাজেই আছেন। তাদেরকে খুঁজে বের করে তাদের সাথে থাকবেন। তখন দেখবেন যে আপনি যেই কারণে রেগে আগুন হয়ে যেতেন উনি সেই ব্যাপারে ঠান্ডা পানির মত শীতল। এই রকম মানুষের সান্নিধ্য আপনাকে সবরকারি হতে সাহায্য করবে। 

৩. যদি কখনো আপনার রাগ দেখানোর মত পরিস্তিতি তৈরি হয় তখন আপনি নিজেকে বলবেন ঠিকআছে রাগ দেখাবা তুমি তবে একটু পরে, যদি কিছু সময় ধৈর্য দরতে পারেন এবং তারপরে রাগ করেনও তবে সেই রাগ হবে সহনীয় রাগ, সেটায় বেসবরের কিছু থাকবেনা। যে রাগে ক্ষতিকর কিছু হবেনা। যত বদমেজাজি আছে দেখবেন যে তারা তৎক্ষণাৎ কিছু একটা করে ফেলতে চায়। তাই তৎক্ষণাৎ রাগ করা যাবেনা, রাগ করলেই কিছু সময় পরে করুন তাহলে ক্ষতিকর কিছু হবেনা। 

৪. বদ মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করার যেই আমল গুলো আছে সেগুলো করবেন, যেমনঃ আয়ুজুবিল্লাহ হিমিনাশ শাইতানির রাজিম বেশি বেশি করে পাঠ করবেন, কোরআনে কারিমে আল্লাহ বলেন- শয়তান যদি তুমাদের রাগায়, আখেরাত ধ্বংস করে, দুনিয়া ধ্বংস করে এসব থেকে বাছার জন্য আয়ুজুবিল্লাহ হিমিনাশ শাইতানির রাজিম পড়ুন। এটা আল্লাহ মানুষকে নির্দেশ করেছেন। অনেকের বাসায় এমন মানুষ রয়েছেন যারা খুব বেশি বদরাগী, যতই বুঝান কোন কাজ হয়না তাঁদেরকে পানি অথবা অন্য কোন খাবার জিনিষের মধ্যে সাত বার আয়ুজুবিল্লাহ পাঠ করে ফু দিয়ে খাওয়াতে পারেন। 

আমাদের অনেকের ঘড়ের এমন ছোট ছোট বাচ্ছা রয়েছে যারা খুব বেশি দুষ্টমি করে এবং অনেক বেশি জেদ করে তাদেরকেও আপনি আয়ুজুবিল্লাহ হিমিনাশ শাইতানির রাজিম পরে খাবার কোন কিছুতে ফু দিয়ে খাওয়াতে পারেন। এই আমলটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর হয়। তবে এটি সর্বস্থরের মানুষের জন্যই কাজ করে। 

উপসংহার

ধৈর্যশীল হওয়ার উপায় অনেক আছে তবে এগুলো কার্যকর করা কঠিন, আপনি যদি ধৈর্যশীল হওয়ার যেকোন আমল মেনে চলতে পারেন তাহলে আল্লাহ নিশ্চয়ই আপনার ধৈর্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দিবেন। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদেন দুনিয়াতেই উত্তম নিয়ামত দিয়ে পুশিয়ে দেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *