দুনিয়া ও আখেরাত ধ্বংসকারী সাতটি কাবিরা গোনাহ
নবি করিম (সাঃ) তার উম্মতকে সতর্ক করে বলেছেন তোমরা ৭টি মহাপাপ থেকে বিশেষ করে বিরত থাকবে, কোন অবস্তাতেই যেন এই অপরাধ গুলো তোমাদের স্পর্শ না করে। এব্যাপারে তোমরা সাবধান থাকবে।
যেকোন কবিরা গোনাহ, যেকোন মহাপাপ, যেকোন বড় অপরাধ, সেটাই মানুষকে ধ্বংস করে। এই পাপ গুলো দুনিয়া এবং আখেরাত দুটাই ধ্বংস করে। কবিরা গোনা গুলোর মধ্যে সাতটি কবিরা গোনা রয়েছে যেঁগুলো মানুষকে ধ্বংস করে দেয়।
আরও পড়ুনঃ ভাগ্য পরিবর্তনের ৩টি সহজ আমল
এই গোনাহ গুলো থেকে বাছার জন্য নবি করিম সাঃ বিশেষ ভাবে আমাদের সতর্ক করেছেন। আখেরাতের অনন্ত কালের যে যাত্রা, সেই যাত্রায় কোন গোনাহটি আমাদের ধ্বংস করবে সেটা সতর্ক করার জন্যই আল্লাহ রাসুলকে পাঠিয়েছিলেন।
নবি বলেন আমি তোমাদের কমর ধরে ধরে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি কিন্তু তোমরা লাফিয়ে লাফিয়ে জাহান্নামে যেতে চাউ, সয়তান তোমাদের সেদিকেই নিয়ে যায়।
দুনিয়া ও আখেরাত ধ্বংসকারী সাতটি কাবিরা গোনাহ
শিরক
আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করা, আল্লাহর সাথে যদি কেউ শরীক সাব্যস্ত করে তাহলে এই গোনাহকি মানুষকে সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করে, যত নেক আমল, তেলাওয়াত, জিকীর, নামায, রোজা, দান, সাদকা, মুহূর্তের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
আল্লাহ কুরআনে বলেছেনঃ হে রাসুল আপনার উপর এবং আপনার পর্বে যত নবি রাসুল আসেছেন তাদের সবার উপর একটি নির্দিষ্ট আদেশ ছিল, যে আপনি নবি, রাসুল হয়ে যদি শিরক করেন তাহলে আপনার সকল আমল, ইবাদত নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই বরবাদ হয়ে যাবে।
আমাদের মুসলমানদের মধ্যে এইরকম অনেক মুসলমান আছেন যারা এই রকম শিরকে লিপ্ত হয়ে তার সকল আমল বরবাদ করে ফেলেন।
আপনি কোন কবরে, কোন মাজারে, কোন মৃত ব্যাক্তির কাছে সন্তান পার্থনা করলেন, বাবসার জন্য উন্নতি চাইলেন, এই রকম পুজা করতে শুরু করেন, মাজারে সিজদাহ দিতে শুরু করেন যে আল্লাহর কাছে যেই রকম শক্তি রয়েছে এই মৃত ব্যাক্তির কাছেও সেই রকম শক্তি রয়েছে, সে সন্তান দিতে পারে, বাবসার উন্নতি করাতে পারে, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করিয়ে দিতে পারে, রোজি রোটিতে বরকত দিতে পারে, এই রকম বিশ্বাস আপনি লালন করেন তাহলে সাথে সাথে আপনার সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে, নষ্ট হয়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ বিপদ থেকে মুক্তির ৪টি সহজ দোয়া
ব্ল্যাক ম্যাজিক
ব্ল্যাক ম্যাজিক যেঁটাকে বলা হয়, বাংলাদেশে এখন এটা আনাছে কানাছে, ঘড়ে ঘড়ে, গ্রামে শহরে সব যায়গায় এই অপরাধটি ছেয়ে গেছে। ব্ল্যাক ম্যাজিক যেঁটাকে আমরা কালো জাদু বা যাদুটুনা বলে থাকি এটার দাঁরা মানুষের ক্ষতি করা হয় সয়তানের সাহায্য নীয়ে।
আল্লাহ তায়ালা সয়তানকে কিছু শক্তি দিয়ে রেখেছেন, তার থেকে সাহায্য নেওয়া রীতিমত কুফরি। কুফরি করে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে তাঁদের সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য। মানুষকে বিপদে ফেলা হয়, অসুস্থ করে দেওয়া হয় একসময় সে মারা যায়।
আরও পড়ুনঃ নারীদের জান্নাত পাওয়ার ১১টি সহজ আমল
অনেক নামাজি মানুষ আছে যারা এই জাতীয় কবিরাজের কাছে গিয়ে তাবিজ নেয়, এবং কুফরি করে ধ্বংস করে দেয়। এইগুলো খুবি জঘন্যতম অপরাধ। কোন ইমানদার যদি এই কালো জাদুর আস্রয় নেন তাহলে সে নিশ্চয়ই ধ্বংস হবে, তার ইমান, আমল সব ধ্বংস হয়ে যাবে।
কারণ এই পাপটি সাতটি মহা পাপ গুলোর মধ্যে একটি। এইরকম ব্ল্যাক ম্যাজিকের কাজ যারা করেন তাদের ইসলামী আইনে মৃত্যু দন্ড দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে।
অন্যায় ভাবে হত্যা
অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করা একটি মহা পাপ, বড় কবিরা গোনাহ। রাজনৈতিক কারণে, সম্পত্তির কারণে, শত্রুতার কারণে এবং যেকোন কারণে মানুষ হত্যা একটি বড় মহা পাপ, আমরা আজকাল মানুষ হত্যা সবাই করি,
সেটা হলো আপনি যখন জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেন তখন ভুল বসত বা যেকোন ভাবে সন্তান গর্বে চলে আসলে তখন ডাক্তারের কাছে গিয়ে তাঁকে মেরে ফেলা হয়, এটাও এক প্রকারের হত্যা এবং এই সন্তান গুলো হাশরের ময়দানে মা-বাবার বিরুদ্দে দাঁড়াবে।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে বুজবেন আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসেন?
সুদ দেওয়া-নেওয়া
সুদ এখন আমাদের দেশে একটি সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে, যেকেউ বেবসা শুরু করতে চায় লোন নিয়ে, বিদেশে যেতে চায় সে সময়েও সুদে লোন নেয়। এরকম সুদি লোন নিয়ে ঘড়ে ঘড়ে এজকাল কাজ করার প্রবণতা রয়েছে।
গুটা পৃথিবীটাঁকে সয়তানি সম্পদায় সুদের উপরে দার করিয়েছে, অতছ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুদের ব্যাপারে কটুর ভাবে সতর্ক করেছেন, যেটা অন্য কোন অপরাধের কারণে করেননি।
আল্লাহ কুরআনে বলেনঃ যারা সুদের কার্বার কর, সুদের লেনদেন কর তারা আল্লাহ ও তার রাসুলের সাথে যুদ্ধের জন্য পস্তুতি নিয়ে রাখ।
আরও পড়ুনঃ যাদের আমল আল্লাহ কবুল করেন না
এতিমের সম্পদ বক্ষন
আমাদের সমাজে বহু চাচারা রয়েছেন যারা ভাই মারা যাওয়ার পরে বাতিজাদের সম্পদ চলে বলে কৌশলে হাতিয়ে নেন, খাওয়ার চেষ্টা করেন।
এতিমের সম্পদ বক্ষন করা আর জাহান্নামের আগুন বক্ষন করার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, নবি করিম (সাঃ) বলেছেন তোমার হাতের দুটি আঙ্গুল যেমন পাশাপাশি, ঠিক তেমনি ভাবে যে ব্যাক্তি এতীমকে লালন পালন করবে সে ব্যাক্তি আর আমি জান্নাতে এই রকম পাশাপাশি থাকব।
অন্য যেকোন মানুষের সম্পদ মেরে খাওয়ার থেকে এতীমের সম্পদ মেরে খাওয়া বেশি ধ্বংসাত্মক।
জীহাদের ময়দান থেকে পলায়ন
কখনো যদি আপনার উপর জ্বিহাদ ফরজ হয়ে যায়, এবং আপনি জ্বিহাদে গিয়ে জ্বিহাদের ময়দান থেকে প্রান বাছানোর জন্য পালিয়ে আসেন, এটাও কাবিরা গোনাহ। শুধু কবিরা গোনাহ নয় বড় কবিরা গোনাহ। মহাপাপের মধ্যে বয়ংকর মহাপাপ।
কারণ ইমানদার কখনো জীবন বাঁচানোর জন্য পলায়ন করবে এটা তার জন্য জায়েজ হতে পারেনা। আল্লাহর পরে সে জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবে, যদি সে পলায়ন করে তাহলে সে কবিরা গোনাহ করলো।
নারীর ইজ্জতের অপবাধ
আপনি যদি কখনো দেখেন একটা ছেলে-মেয়ে একটি ঘড় থেকে বের হচ্ছে, কিংবা অন্য যেকোন আলামত দেখে বলেন তারা জিনাহে লিপ্ত হয়েছে, এটা বলে মিথ্যা অপবাধ দেন, তাহলে মনে রাখুন এটাও একটি বড় কবিরা গোনাহ।
কোন আলামত থেকে কারো চরিত্রের অপবাধ দিয়েছেন এই রকম ব্যাক্তিকে কুরআনী আইনে ইসলাম থাকে ৮০টি বেত্রাগাত করার নির্দেশ দিয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ কারোর ব্যাপারে একটা বাজে কথা বললেন এটাকে আপনি কিছুই মনে করছেন না, অতছ আল্লাহর কাছে এটা একটি বড় অপরাধ। তাই কোন আলামতের উপরে ভিত্তি করে কাউকে অপবাধ দেওয়া যাবেনা, দোষারোপ করা যাবেনা
উপসংহার
পাপ গুলোর মধ্যে এই ৭টি মহা পাপ থেকে আল্লাহ আমাদের বেছে থাকার তাওফিক দান করুন, ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জন করার তাওফিক দান করুন, হালাল-হারাম বুঝে খাওয়ার তাওফিক দান করুন, সুদ থেকে বেছে থাকার তাওফিক দান করুন।