ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং কত টাকা লাগে
ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে তা জানার আগে প্রথমে একটি বিষয় জানা জরুরী যে ই পাসপোর্ট করার জন্য প্রধান সনদপত্র হলো ভোটার আইডি কার্ড, তবে অনেক ক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ড ছাড়াও পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করা যায়।
তবে ভোটার আইডি কার্ড না থাকলে ২০ বছরের বেশি নাগরিকদের ভিবিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়।
আমরা জানি যে একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসাবে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সনদপত্র হলো ভোটার আইডি কার্ড, আর বর্তমানে ১৪-১৬ বছর হলেই ভোটার নিবন্ধন করা যাচ্ছে।
- আরও পড়ুনঃ ই পাসপোর্ট চেক – E Passport Check
ই পাসপোর্ট করার জন্য একটি প্রধান সনদপত্র হলো ভোটার আইডি কার্ড, ২০ বছর বয়সের বেশি হলে ই পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য ভোটার আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক প্রয়োজন,
তবে আবেদনকারীর বয়স যদি ২০ বছরের কম হয় এবং তিনি ভোটার নিবন্ধন না করে থাকেন তাহলে তার ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন ই পাসপোর্ট আবেদনের জন্য প্রধান সনদপত্র হিসাবে দাখিল করতে পারবেন।
২০ বছরের বেশি হলে ভোটার আইডি কার্ড ব্যতীত ই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়, তাই আপনার বয়স যদি ২০ বছরের বেশি হয় তাহলে প্রথমে ভোটার নিবন্ধন করার জন্য আবেদন করতে হবে,
এবং ভোটার আইডি কার্ড হাতে পাওয়ার পর ই পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
তু চলোন এবার জেনে নেওয়া যাক প্রধান সনদপত্র ভোটার আইডি কার্ডের পাশাপাশি ই পাসপোর্ট করতে আরও কি কি ডকুমেন্ট লাগে?
ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
পাসপোর্ট একটি জটিল সনদ, যদি কোন কারণে আপনার ই পাসপোর্টের যেকোন একটি তথ্য ভূল হয়ে যায় তাহলে আপনাকে যে কত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে তার কোন শেষ নেই।
এজন্য পাসপোর্ট করার সময় সবদিক বিবেচনা করে সঠিক নাম, ঠিকানা, পিতা-মাথার নাম এবং অন্যান্য তথ্য দিতে হবে এবং তা বার বার যাচাই করে দেখতে হবে কোন ভূল আছে কি না।
ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে সে পসঙ্গে যাওয়া যাকঃ
- আপনার বয়স যদি ২০ বছরের বেশি হয় তাহলে প্রধান সনদ হিসাবে ভোটার আইডি কার্ডের দুটি কপি প্রয়োজন হবে।
- ২০ বছরের কম বয়স হলে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন হবে (English Version) তবে ভোটার আইডি কার্ড থাকলে জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই।
- ১৮ বছরের কম বয়স হলে আপনার পিতা-মাথার ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার আবেদনপত্রে বাধ্যতামূলক উল্লেখ করতে হবে।
- HSC/SSC সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে (যদি থাকে)
- আপনার এলাকার নির্বাচিত চেয়ারম্যান কৃত নাগরিক সনদপত্র/চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট।
- বিদ্যুৎ বিলের কপি।
- সরকারী চাকরিজীবী হলে GO/NOC প্রয়োজন হবে (যদি থাকে)
- বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহ নিকাহনামা প্রয়োজন হতে পারে।
- পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি।
ব্যাস এই সনদ গুলো থাকলেই আপনি ই পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করতে পারবেন, তবে কোন কোন ক্ষেত্রে আরও দুই একটি সনদ প্রয়োজন হতে পারে।
এই সকল তথ্য দিয়ে ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম ফিলাপ করার পর তা ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন, সকল তথ্য সঠিক হয়েছে তা চেক করে বার বার নিশ্চিত হোন। কেননা পাসপোর্টের যেকোন ভুল সংশোধন করা অত্যন্ত জটিল।
১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
আমরা জানি যে দুটি মেয়াদে ই পাসপোর্ট করা যায়, ৫ বছর এবং ১০ বছর মেয়াদে। একটি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে তা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।
উপরে উল্লেখিত সনদ গুলো দিয়েই আপনি ৫ বছর কিংবা ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এজন্য আলাদা কোন ডকুমেন্ট প্রয়োজন নেই, তবে এর ফী কিছুটা বেশি প্রধান করতে হবে ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের তুলনায়।
১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে সাধারণত ভোটার আইডি কার্ড, ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন, নাগরিক সনদপত্র, পিতা-মাথার ভোটার আইডি কার্ড, এবং বিদ্যুৎ বিলের কপি প্রয়োজন হয়। যা ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্যেও প্রাচুর্য।
এছাড়াও একটি বিষয় স্পষ্ট প্রয়োজন যে আপনার বয়স যদি ১৮ বছরের কম হয় অথবা ৬৫ বছরের বেশি হয় তাহলে আপনি চাইলেও ১০ বছর মেয়াদি এবং ৬৪ পৃষ্টার পাসপোর্ট নিতে পারবেন না।
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং কত টাকা লাগে
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে তা আমরা উপরে লিখেছি, তু এবার যানা যাক পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?
আমরা জানি যে ই-পাসপোর্ট দুটি মেয়াদের হয়ে থাকে একটি ৫ বছর এবং অন্যটি ১০ বছর, ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের তুলনায় ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করতে কিছুটা বেশি ফী প্রধান করতে হয়,
তবে এর বাহীরেও আরও একটি বিষয় রয়েছে তা হলো পাসপোর্টের পৃষ্টা সংখ্যা, দুটি মেয়াদের পাশাপাশি পাসপোর্টের পৃষ্টাও রয়েছে দুটি সংখ্যার, একটি ৪৮ পৃষ্টা এবং অন্যটি ৬৪ পৃষ্টা।
এক্ষেত্রেও ৪৮ পৃষ্টার পাসপোর্টের থেকে ৬৪ পৃষ্টার পাসপোর্টের জন্য বেশি ফী দিতে হয়। তাই দুটি ভাগে পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে তা বর্ণনা করা হলো।
উল্লেখ্য যে এখানে শুধু মাত্র সরকারী ফী-এর পরিমান লিখা হয়েছে, এর বাহীরে আপনি যদি কোন এজেন্সি দিয়ে ফরম ফিলাপ করেন তার একটা ফী দেওয়া লাগবে।
ই-পাসপোর্ট আবেদন সরকারী ফীঃ
৫ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্টা ই-পাসপোর্ট ফীঃ
- ১৫ থেকে ২১ দিনে ডেলিভারি – ৪,০২৫ টাকা,
- ৭ থেকে ১০ দিনে ডেলিভারি – ৬,৩২৫ টাকা,
- ২ দিনের মধ্যে ডেলিভারি – ৮,৬২৫ টাকা,
৫ বছর মেয়াদি ৬৪ পৃষ্টা ই-পাসপোর্ট ফীঃ
- ১৫ থেকে ২১ দিনে ডেলিভারি – ৬,৩২৫ টাকা,
- ৭ থেকে ১০ দিনে ডেলিভারি – ৮,৬২৫ টাকা,
- ২ দিনের মধ্যে ডেলিভারি – ১২,০৭৫ টাকা,
১০ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্টা পাসপোর্ট ফীঃ
- ১৫ থেকে ২১ দিনে ডেলিভারি – ৫,৭৫০ টাকা,
- ৭ থেকে ১০ দিনে ডেলিভারি – ৮,০৫০ টাকা,
- ২ দিনের মধ্যে ডেলিভারি – ১০,৩৫০ টাকা,
১০ বছর মেয়াদি ৬৪ পৃষ্টা পাসপোর্ট ফীঃ
- ১৫ থেকে ২১ দিনে ডেলিভারি – ৮,০৫০ টাকা,
- ৭ থেকে ১০ দিনে ডেলিভারি – ১০,৩৫০ টাকা,
- ২ দিনের মধ্যে ডেলিভারি – ১৩,৮০০ টাকা,
এই হলো বাংলাদেশ থেকে ই পাসপোর্ট আবেদনের সরকারী ফী, এছাড়াও প্রবাসী এবং প্রবাসী স্টুডেন্টদের জন্য রয়েছে আলাদা ই-পাসপোর্ট ফী তালিকা।
Reference: সকল প্রকার ই-পাসপোর্ট আবেদনকারীদের জন্য সরকার নির্ধারিত ফী দেখুন – ePassport Fees by Government.
পাসপোর্ট ফি জমা ব্যাংক নাম
একটি ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং কত টাকা লাগে তা আমরা যথা সম্ভব সুন্ধর ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি, চলোন এবার যানা যাক পাসপোর্ট ফী জমা কোন কোন ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে পারবেন।
পাসপোর্ট ফী দুই ভাবে দেওয়া যায় অনলাইনে এবং অফলাইনে।
পাসপোর্ট ফী অনলাইন পেমেন্টঃ
অনলাইনে পাসপোর্ট ফী পরিশোদ করার জন্য অনেক সরকারী ওয়েবসাইট রয়েছে, এর মধ্যে একটি হলোঃ IBAS Finance GOV BD বা অটোমেটেড চালান সিস্টেম।
এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে, বিকাশ, নগদ, উপায় সহ, বাংলাদেশের যেকোন ইন্টারনেট ব্যাংকিং সাপোর্ট করা ব্যাংক, এবং ভিসা, মাস্টারকার্ড, অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড দিয়েও পেমেন্ট করতে পারবেন।
IBAS Finance GOV BD ওয়েবসাইট থেকে পাসপোর্ট ফী পরিশোদ করার জন্য ওয়েবসাইট প্রবেশ করুন,
- তারপর পাসপোর্ট ফি মেন্যুটিতে ছ্যাপ দিন,
- তারপর আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ বছর অথবা ১০ বছর নির্বাচন করুন,
- তারপর ৪৮ পৃষ্টা অথবা ৬৪ পৃষ্টা নির্বাচন করুন,
- এরপর আপনার পাসপোর্টের মোট ফি পরিমান দেখাবে ঠিক থাকলে OK বাঁটনে ক্লিক করে এগিয়ে যান।
- তারপর জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন নাম্বার লিখুন,
- তারপর জন্ম তারিখ লিখে Check NID বাঁটনে ছ্যাপ দিয়ে আপনার তথ্য সঠিক কিনা তা যাচাই করুন,
- তারপর যেই ব্যাক্তির নামে পাসপোর্ট আবেদন করা হচ্ছে তার মোবাইল নাম্বার লিখুন, একি মোবাইল নাম্বারটি অবশ্যই পাসপোর্ট আবেদন ফ্রমে লিখবেন।
- তারপর একটি ইমেইল লিখুন, এটিও পাসপোর্ট আবেদন ফ্রমে লিখে দিবেন।
- তারপর আপনি কীভাবে পেমেন্ট করতে ছান সেটা নির্বাচন করুন।
- বিকাশ, নগদ, এবং উপায় দিয়ে পেমেন্ট করতে মোবাইল ব্যাংকিং নির্বাচন করে পেমেন্ট করুন।
- ব্যাংক দিয়ে পেমেন্ট করতে ইন্টারনেট ব্যাংকিং নির্বাচন করুন তারপর আপনার ব্যাংকটি বেছে নিয়ে পেমেন্ট করুন।
- কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করতে কার্ড পেমেন্ট নির্বাচন করুন এবং কার্ডের তথ্য দিয়ে পেমেন্ট করুন।
পাসপোর্ট ফি অফলাইন পেমেন্টঃ
অনেক ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি অফলাইনে পেমেন্ট করা যায়, এর মধ্যে রয়েছে Bank Asia, Sonali Bank, Brac Bank, EBL Bank, City Bank, UCB Bank, Ab Bank, DBBL Bank, Midland Bank।
এই ব্যাংক গুলো দিয়ে পাসপোর্ট ফি অফলাইনে পেমেন্ট করে তার রশিদ গ্রহন করতে পারেন, তারপর আপনার পাসপোর্ট আবেদন প্রিন্ট কপির সাথে অরিজিনাল রশিদটি যোক্ত করে জমা দিন।